কারিগরি দলের গাফিলতিতে বৃত্তি পরীক্ষার ফলে ভুল

একই দিনে দুপুরে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সন্ধ্যায় তা স্থগিত করার পর প্রশ্ন উঠেছে, কেন এবং কাদের কারণে শিশুদের এই পরীক্ষা নিয়ে এত বড় ভুলের ঘটনা ঘটল। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, ফলাফল তৈরির সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কারিগরি দলের ভুলের কারণে মূলত এ ঘটনা ঘটেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ‘দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের’ জন্য এখন হাজারো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। কিন্তু ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণ দেখিয়ে একই দিন সন্ধ্যায় এ ফল স্থগিত করার কথা জানায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

কীভাবে ভুলটি হয়েছে, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ফল তৈরির সঙ্গে যুক্ত কারিগরি দল ভুলটি করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর ধরে না–হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের মতো করে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল তৈরি করতে গিয়েই সমস্যাটি হয়েছে। ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হতো উপজেলাভিত্তিক। বৃত্তি পরীক্ষার ফল তৈরিতেও উপজেলাভিত্তিক ডেটা নিয়ে কাজ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের কোডের ক্ষেত্রে ভুল করা হয়েছে। এতে একাধিক উপজেলার কোড (কম্পিউটারের কাজের একটি ব্যবস্থা) একই হওয়ায় সমস্যাটি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হয়তো ঝিনাইদহের একটি উপজেলার শিক্ষার্থীর যে কোড ছিল, তা হয়তো সুনামগঞ্জের কোনো উপজেলায়ও ছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে ফল তৈরির জন্য ডেটা নিয়ে যখন কাজ করা হয়, তখন একই কোড হওয়ায় ফলেও ভুল হয়েছে। দুই কোড যখন এক হয়ে গেছে, তখন হয়তো যে শিক্ষার্থীর বৃত্তি পাওয়ার কথা নয়, সেও বৃত্তির তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে, আবার উল্টোটাও ঘটেছে। এমনটি নিবন্ধন করে পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও কেউ কেউ বৃত্তি পেয়ে গেছে।

যেমন বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার পাঁচপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিল এক শিক্ষার্থী। কিন্তু সে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। কিন্তু তাকেও বৃত্তি (সাধারণ কোটা) পাওয়ার তালিকায় রাখা হয়েছে। এ রকম আরও ঘটনা ঘটেছে।

এবার পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছিল। অবশ্য পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। বাকিরা নিবন্ধন করেও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

প্রাথমিক বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পায়। এর মধ্যে মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল) বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা মাসে ২২৫ টাকা করে পাবে। এ ছাড়া আলাদা করে বৃত্তি পাওয়া সব শিক্ষার্থী বছরে এককালীন ২২৫ টাকা করে পায়। বৃত্তির মোট কোটা হলো ৮২ হাজার ৫০০টি। অবশ্য গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল ২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এর মধ্যে মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল) বৃত্তি পেয়েছে ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ কোটায় পেয়েছে ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন। এখন সংশোধিত ফলের পর সংখ্যাটি কত হয়, সেটি জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ভুলের সংখ্যাটি একেবারে কমও হবে না। এখন ফল সংশোধন করা হচ্ছে। আজকের মধ্যেই সংশোধিত ফল প্রকাশের কথা রয়েছে। তিনি বলেন, কারিগরি দলের ভুল ছিল বলে মনে হয়েছে। কারিগরি দলের কেউ কেউ তা স্বীকারও করেছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, সংশোধিত ফলে বাদ হওয়া ফলাফলে বৃত্তি পাওয়া কেউ কেউ বাদ যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *