১. অর্থনীতি কেন পড়ব
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান আসাদ করিম খান বলেন, ‘অর্থনীতি ছাত্রছাত্রীদের যেকোনো সমস্যা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়, তাদের যুক্তিনির্ভর মননশীলতার প্রশিক্ষণ দেয়। আমাদের যেসব তরুণ শিক্ষার্থী গবেষণা কিংবা আর্থিক খাতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ খুঁজছে, তাঁদের জন্য অর্থনীতি একটা ভালো সুযোগ।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন নাহিয়ান বিন খালেদ। বর্তমানে পিএইচডি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘জাতীয়, আঞ্চলিক কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা, গৃহীত বিভিন্ন নীতি আর সামাজিক প্রথার সঙ্গে আমাদের বাস্তব জীবনের বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক জানার জন্যই অর্থনীতি পড়া উচিত। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান আর রাষ্ট্রের আয়, ব্যয়, জীবনমান, কিংবা আচরণের ওপর ঘটনাপ্রবাহের তাত্ত্বিক, গাণিতিক ও প্রায়োগিক প্রভাব জানা যায়।’
২. কোথায় পড়ানো হয়
দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক করার সুযোগ আছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়েও অর্থনীতি বিষয়ে ‘মেজর’ করা যায়। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী থেকে শুরু করে নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল, ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়তে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসে ভর্তি হয়েও অর্থনীতি পড়া যায়।
৩. ক্যারিয়ার কোথায়
আসাদ করিম খান বলেন, ‘এনজিও এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এখন পিডব্লিউসি, কেপিএমজিসহ নানা আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের কাজ বিস্তৃত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার গড়ছে। বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠানেও কাজের সুযোগ পাচ্ছে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা।’ নাহিয়ান বিন খালেদ জানান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অর্থনীতি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সুযোগ আছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ভেদে দেশে ও বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা করা যায়। করোনা–পরবর্তী বাস্তবতায় সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতিবিদদের চাহিদা আরও বাড়বে বলে মনে করেন তাঁরা।
৪. উচ্চশিক্ষার সুযোগ কেমন
অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে বিদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যবসাসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়, যেমন মার্কেটিং বা ফাইন্যান্সেও উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ বেড়ে যায়। আবার অন্য বিষয়ে পড়েও আপনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করতে পারেন। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে শুরুতে কিছু মৌলিক কোর্স করতে হবে। অর্থনীতিসংক্রান্ত বিষয়ে পিএইচডির সুযোগও বাড়ছে। নাহিয়ান বিন খালেদ মনে করেন, ‘অর্থনীতিতে স্নাতক করে পরে স্বাস্থ্য অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য, উন্নয়ন অধ্যয়নের মতো বিষয়েও পড়তে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পাঠ্যক্রম আর পাঠদানের গভীরতার পার্থক্য থাকতে পারে, তাই এ ব্যাপারে আগে থেকে খোঁজ নেওয়া ভালো। উন্নয়ন অর্থনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, স্বাস্থ্য অর্থনীতি, পরিবেশ অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি করছেন।
৫. কাদের পড়া উচিত
আসাদ করিম খানের বক্তব্য, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থান এখন বদলেছে। আমরা ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। অর্থনীতির যথাযথ শিক্ষা মানুষকে যেকোনো সমস্যার যুক্তিনির্ভর ও বিশ্লেষণভিত্তিক একটা সমাধান খোঁজার চেষ্টা করতে শেখায়। এ ধরনের ক্ষেত্রে যাদের আগ্রহ আছে, তারা অর্থনীতিতে পড়তে পারে।’
৬. কাদের এ বিষয়ে পড়া উচিত নয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান জানান, অর্থনীতি বিষয়ে সবার পড়ার আগ্রহ না-ও তৈরি হতে পারে। যাঁরা ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চান কিংবা শিক্ষকতার মতো পেশায় আসতে চান, অর্থনীতি মূলত তাঁদের জন্য। এ ছাড়া যাঁরা আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় কিংবা ব্যবসা-বাজার-সরকার সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণে আগ্রহী, তাঁরা অর্থনীতি পড়তে পারেন। হিসাব–নিকাশের প্রতি যাঁদের ভীতি আছে, তাঁদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
৭. এই বিষয় সম্পর্কে কোন ধারণাটা ভুল
অর্থনীতি পড়তে গণিত বা পরিসংখ্যান প্রয়োজন হয় না বলে অনেকেই মনে করেন। এখনকার আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় অর্থনীতির অনেক তত্ত্ব গণিত ও পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে হয়। তাই গণিত ও পরিসংখ্যানের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবহারিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।
৮. ভর্তির প্রাথমিক যোগ্যতা কী
বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে নির্দিষ্ট জিপিএ থাকলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হতে পারেন। মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকে যেকোনো বিভাগে পড়েই অর্থনীতিতে আবেদন করা যায়। আবার অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতক করেও অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করা যায়।
৯. ভবিষ্যৎ কেমন
নাহিয়ান বিন খালেদ জানান, সামাজিক বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে অর্থনীতি কয়েক শতাব্দীজুড়ে অন্যতম প্রভাবশালী বিষয় হয়ে আছে। এ কারণেই ১৯৬৮ সাল থেকে অর্থনীতিতেও নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়েছে। গতিশীল শাস্ত্র হিসেবে এই যুগেও অর্থনীতি প্রাসঙ্গিক। এর কারণ হলো মানুষের সব কর্মকাণ্ডেরই একটা অর্থনৈতিক দিক থাকে। রাষ্ট্রের অর্থনীতি যেমন জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি, ব্যয় সংকোচন থেকে শুরু করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য, পরিবেশ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অর্থনীতি জড়িয়ে থাকে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে অর্থনীতির বিশ্লেষণ আর গবেষণায় বড় তথ্যভান্ডারের ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানের শিক্ষার্থীদের তাই তাত্ত্বিক ও গাণিতিক জ্ঞানের সঙ্গে এসব তথ্য সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা আর বিশ্লেষণের জন্যও বাড়তি দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
১০. কী কী পড়ানো হয়
নানা তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয় অর্থনীতিতে পড়ানো হয়। আধুনিক অর্থনীতির পাঠ্যক্রমে যেমন ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির নানা তত্ত্ব বা গণিত-পরিসংখ্যান-ইকোনমেট্রিকস পড়ানো হয়, তেমনি ক্রীড়াতত্ত্ব (গেম থিওরি), আচরণগত অর্থনীতি (বিহেভিয়ারাল ইকোনমিকস) ও পরীক্ষামূলক অর্থনীতির (এক্সপেরিমেন্টাল ইকোনমিকস) ধারণাও দেওয়া হয়।